শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিজ্ঞানময় কুরআনে বিজ্ঞানের অনেক গুলো তত্ত্ব ও তথ্যের কথা উল্লেখ আছে। আমাদের প্রিয় রাহাবরদের ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় শুধু পড়ে ‘সওয়াব’ এই ধারনায় না থেকে, এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উদঘাটনে ‘সওয়াব’ কথা গুলো জুড়ে দিতে পারলে অধিকতর শ্রেয় মনে হতো। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিজ্ঞান সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আমাদের অনেক ধারণা পাল্টে দিতে পারে।
পবিত্র কুরআনে সপ্ত আকাশ এবং সপ্ত পৃথিবীর কথা বহু জায়গায় উল্লেখ আছে। সুরা মুলুকের ৩নং আয়াত, সুরা নুহ’র ১৫ নং আয়াত এবং সুরা তালাকের ১২ নং আয়াতে আল্লাহ ০৭ (সাত)টি আকাশ সৃষ্টির কথা বলেছেন। সুরা তালাকের ১২ নং আয়াতে সাতটি আকাশের মত সাতটি পৃথিবীর কথা উল্লেখ করেছেন। ‘সামাওয়াত’ দ্বারা আকাশ এবং ‘আল-আরদ’ দ্বারা ভূমি/জমি/পৃথিবী বুঝতে পারা যায়। আধুনিক যুগের বিজ্ঞান পবিত্র কুরআনে দেওয়া সেই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রায় পনের শত বছর আগের অবৈজ্ঞানিক যুগের কথা গুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারাহ’র ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ ফেরেস্তাদের ডেকে পৃথিবীতে মানুষ/আদম সৃষ্টির কথা বলেছেন। এ আদেশ কি কেবল আমরা যেখানে বসবাস করছি, সেই পৃথিবী নামক গ্রহের জন্যে ? হতে পারে পৃথিবীর ন্যায় অন্য গ্রহ গুলোতেও আমাদের মতো আল্লাহর প্রতিনিধি বিদ্যমান রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে এতএত আলোকবর্ষ দূরে যে আমরা এখনো তাদের হদিস করতে পারিনি। হয়তো এমনতো সময় আসতে পারে, বিজ্ঞান কোনো একটা ‘যান’ আবিষ্কার করে দেখিয়ে দিবে যা দিয়ে আমরা আলোকবর্ষ দূরের পথ পাড়ি দিয়ে সেই গ্রহ / পৃথিবীতে গিয়ে পৌঁছাতে পারি! পবিত্র কুরআনেই যেহেতু উল্লেখ আছে, অনুরূপ ৭টি পৃথিবীর কথা। সুতরাং এখনি যদি বিজ্ঞান পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান দিতে পারে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে অন্য ৬টি পৃথিবীর সন্ধান দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নাসা’র দেওয়া চমকপ্রদ তথ্য গুলো পবিত্র কুরআনের পরতে পরতে উল্লেখ আছে, কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের অজ্ঞতা আর অনভিজ্ঞতার কারনে কুরআনে উল্লেখিত বিজ্ঞান সম্পর্কিত তত্ত্ব ও তথ্য গুলো জাতির সামনে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে! আমরা ধর্মের শুধুমাত্র একটা সাইডকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছি। আর এ জন্যেই সম্ভবত কবি কাজী নজরুল ইসলাম মুসলমানদেরকে সতর্ক করে বলেছিলেন-
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা আছি বসে,
বিবি তালাকের ফতুয়া খুঁজেছি ফিকাহ ও কিতাব চসে।”
মুসলমানদের হুঁশ ফিরে আসুক, কুরআনের আলোকে জ্ঞান-বিজ্ঞান-গবেশনায় মনোনিবেশ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
তথ্যসূত্র :
الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ ہَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ ﴿۳﴾
তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবেনা; আবার দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?
Who has created the seven heavens one above another, you can see no fault in the creations of the Most Beneficent. Then look again: Can you see any rifts? সুরা মুলক, আয়াত-৩
اَلَمۡ تَرَوۡا کَیۡفَ خَلَقَ اللّٰہُ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ﴿ۙ۱۵﴾
তোমরা কি লক্ষ্য করনা আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে?
See you not how Allah has created the seven heavens one above another, সুরা নুহ, আয়াত-১৫
وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ ﴿۵﴾
আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা, (সুরা মুলুক, আয়াত ৫ এর অংশ)।
And indeed We have adorned the nearest heaven with lamps,
وَ اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَ یَسۡفِکُ الدِّمَآءَ ۚ وَ نَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِکَ وَ نُقَدِّسُ لَکَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۰﴾
এবং যখন তোমার রাব্ব মালাইকা/ফেরেশতাদের বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব; তারা বললঃ আপনি কি যমীনে এমন কেহকে সৃষ্টি করবেন যারা তন্মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? এবং আমরাইতো আপনার গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। তিনি বললেনঃ তোমরা যা অবগত নও নিশ্চয়ই আমি তা জ্ঞাত আছি। সুরা বাকারাহ, আয়াত- ৩০
And (remember) when your Lord said to the angels: Verily, I am going to place (mankind) generations after generations on earth. They said: Will You place therein those who will make mischief therein and shed blood, – while we glorify You with praises and thanks (Exalted be You above all that they associate with You as partners) and sanctify You. He (Allah) said: I know that which you do not know.
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন
শিক্ষক ও কলামিস্ট
০৫/১২/২০২৫